Friday 27 November 2015

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়:

    বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় (১২ই সেপ্টেম্বর১৮৯৪ - ১লা নভেম্বর১৯৫০ছিলেন একজন জনপ্রিয় ভারতীয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক তিনি মূলত উপন্যাস ও ছোটগল্প লিখে খ্যাতি অর্জন করেন পথের পাঁচালী ও অপরাজিত তাঁর সবচেয়ে বেশি পরিচিত উপন্যাস অন্যান্য উপন্যাসের মধ্যে আরণ্যকআদর্শ হিন্দু হোটেলইছামতী ও অশনি সংকেত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের পাশাপাশি বিভূতিভূষণ প্রায় ২০টি গল্পগ্রন্থকয়েকটি কিশোরপাঠ্য উপন্যাস ও কয়েকটি ভ্রমণকাহিনি এবং দিনলিপিও রচনা করেন বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালী উপন্যাস অবলম্বনে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত চলচ্চিত্রটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ১৯৫১ সালে ইছামতী উপন্যাসের জন্য বিভূতিভূষণ পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার রবীন্দ্র পুরস্কার (মরণোত্তর) লাভ করেন
         বিভূতিভূষণ পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার কাঁচরাপাড়ার নিকটবর্তী ঘোষপাড়া-সুরারিপুর গ্রামে নিজ মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন তার পৈতৃক নিবাস উত্তর ২৪ পরগণা জেলার বারাকপুর গ্রামে তার পিতা মহানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন প্রখ্যাত সংস্কৃত পণ্ডিত পাণ্ডিত্য এবং কথকতার জন্য তিনি শাস্ত্রী উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন মাতা মৃণালিনী দেবী পিতামাতার পাঁচ সন্তানের মধ্যে বিভূতিভূষণ ছিলেন সবার বড়
 
          পিতার কাছে বিভূতিভূষণের পড়ালেখার পাঠ শুরু হয় এরপর নিজ গ্রাম ও অন্য গ্রামের কয়েকটি পাঠশালায় পড়াশোনার পর বনগ্রাম উচ্চ ইংরাজী বিদ্যালয়ে ভর্তি হন সেখানে তিনি অবৈতনিক শিক্ষার্থী হিসেবে পড়ালেখার সুযোগ পেয়েছিলেন ছোটবেলা থেকেই তিনি মেধাবী ছিলেন অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময় পিতা মারা যান ১৯১৪ সালে প্রথম বিভাগে এনট্রান্স এবং ১৯১৬ সালে কলকাতার রিপন কলেজ (বর্তমানে সুরেন্দ্রনাথ কলেজ) থেকে প্রথম বিভাগে আইএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ১৯১৮ সালে একই কলেজ থেকে বিএ পরীক্ষায়ও ডিস্টিইংশনসহ পাশ করেন এরপর তিনি এমএ ও আইন বিষয়ে ভর্তি হয়েছিলেন কিন্তু পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে হুগলী জেলার জাঙ্গীপাড়ায় দ্বারকানাথ হাইস্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ার সময় বসিরহাটের মোক্তার কালীভূষণ মুখোপাখ্যায়ের কন্যা গৌরী দেবীর সাথে বিয়ে হয় কিন্তু বিয়ের এক বছর পরই গৌরী দেবী মারা যান স্ত্রীর শোকে তিনি কিছুদিন প্রায় সন্ন্যাসীর মতো জীবনযাপন করেন পরে ১৩৪৭ সালের ১৭ অগ্রহায়ন (ইংরেজি ৩ ডিসেম্বর১৯৪০) তারিখে ফরিদপুর জেলার ছয়গাঁও নিবাসী ষোড়শীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ে রমা দেবীকে বিয়ে করেন বিয়ের সাত বছর পর একমাত্র সন্তান তারাদাস বন্দোপাধ্যায় (ডাকনাম বাবলু) জন্মগ্রহণ করেন
          শিক্ষকতার মাধ্যমে পেশাগত জীবনে প্রবেশ করেন এসময় কিছুদিন গোরক্ষিণী সভার প্রচারক হিসেবে বাংলাত্রিপুরা ও আরাকানের বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণ করেন পরে খেলাৎচন্দ্র ঘোষের বাড়িতে সেক্রেটারিগৃহশিক্ষক এবং তাঁর এস্টেটের ভাগলপুর সার্কেলের সহকারী ম্যানেজারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন কিছুদিন আবার ধর্মতলার খেলাৎচন্দ্র মেমোরিয়াল স্কুলে শিক্ষকতা করেন এরপর যোগ দেন গোপালনগর স্কুলে এই স্কুলেই তিনি আমৃত্যু কর্মরত ছিলেন এই মহান কথাসাহিত্যিক ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ১লা নভেম্বর তারিখে বিহারের(বর্তমানে ঝাড়খন্ড) ঘাটশিলায় মৃত্যুবরণ করেন
        ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে (১৩২৮ বঙ্গাব্দ) প্রবাসী পত্রিকার মাঘ সংখ্যায় উপেক্ষিতা নামক গল্প প্রকাশের মধ্য দিয়ে তার সাহিত্যিক জীবনের সূত্রপাত ঘটে ভাগলপুরে কাজ করার সময় ১৯২৫ সালে তিনি পথের পাঁচালী রচনা শুরু করেন এই বই লেখার কাজ শেষ হয় ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে এটিই বিভূতিভূষণের প্রথম এবং শ্রেষ্ঠ রচনা এর মাধ্যমেই তিনি বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন এরপর অপরাজিত রচনা করেন যা পথের পাঁচালীরই পরবর্তী অংশ উভয় উপন্যাসেই তার ব্যক্তিগত জীবনের প্রতিফলন ঘটেছে বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায় পথের পাঁচালী উপন্যাসের কাহিনীকে চলচ্চিত্রে রূপদানের মাধ্যমে তার চলচ্চিত্র জীবনের সূচনা করেছিলেন এই চলচ্চিত্রও দেশী-বিদেশী প্রচুর পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছিল এরপর অপরাজিত এবং অশনি সংকেত উপন্যাস দুটি নিয়েও সত্যজিৎ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন এর সবগুলোই বিশেষ প্রশংসা অর্জন করেছিল পথের পাঁচালী উপন্যাসটি ভারতীয় ভাষা এবং ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায় অনূদিত হয়েছে
        পুরস্কার ও সম্মাননা
রবীন্দ্র পুরস্কার - ১৯৫১ (মরণোত্তর)ইছামতী উপন্যাসের জন্য
পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বনগাঁ মহকুমার (লেখকের জন্মস্থান) পারমাদান বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের নাম লেখকের সম্মানার্থে রাখা হয়েছে "বিভূতিভূষণ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য"
তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে:
উপন্যাস
পথের পাঁচালি (১৯২৯)
অপরাজিত (১ম ও ২য় খণ্ড১৯৩২)
দৃষ্টিপ্রদীপ (১৯৩৫)
আরণ্যক (১৯৩৯)
আদর্শ হিন্দু হোটেল (১৯৪০)
বিপিনের সংসার (১৯৪১)
দুই বাড়ি (১৯৪১)
অনুবর্তন (১৯৪২)
দেবযান (১৯৪৪)
কেদার রাজা (১৯৪৫)
অথৈজল (১৯৪৭)
ইচ্ছামতী (১৯৫০)
অশনি সংকেত (অসমাপ্তবঙ্গাব্দ ১৩৬৬)
দম্পতি (১৯৫২)

গল্প-সংকলন
মেঘমল্লার (১৯৩২)
মৌরীফুল (১৯৩২)
যাত্রাবাদল (১৯৩৪)
জন্ম ও মৃত্যু (১৯৩৮)
কিন্নর দল (১৯৩৮)
বেণীগির ফুলবাড়ী (১৯৪১)
নবাগত (১৯৪৪)
তালনবমী (১৯৪৪)
উপলখন্ড (১৯৪৫)
বিধুমাস্টার (১৯৪৫)
ক্ষণভঙ্গুর (১৯৪৫)
অসাধারণ (১৯৪৬)
মুখোশ ও মুখশ্রী (১৯৪৭)
আচার্য কৃপালিনী কলোনি (বর্তমান নাম 'নীলগঞ্জের ফালমন সাহেব', ১৯৪৮)
জ্যোতিরিঙ্গন (১৯৪৯)
কুশল-পাহাড়ী (১৯৫০)
রূপ হলুদ (১৯৫৭)
অনুসন্ধান (বঙ্গাব্দ ১৩৬৬)
ছায়াছবি (বঙ্গাব্দ ১৩৬৬)
সুলোচনা (১৯৬৩)

কিশোরপাঠ্য
চাঁদের পাহাড় (১৯৩৮)
আইভ্যানহো (সংক্ষেপানুবাদ১৯৩৮)
মরণের ডঙ্কা বাজে (১৯৪০)
মিসমিদের কবচ (১৯৪২)
হীরা মাণিক জ্বলে (১৯৪৬)
সুন্দরবনের সাত বৎসর (ভুবনমোহন রায়ের সহযোগিতায়১৯৫২)

ভ্রমণকাহিনী ও দিনলিপি
অভিযাত্রিক (১৯৪০)
স্মৃতির রেখা (১৯৪১)
তৃণাঙ্কুর (১৯৪৩)
ঊর্মিমুখর (১৯৪৪)
বনে পাহাড়ে (১৯৪৫)
উৎকর্ণ (১৯৪৬)
হে অরণ্য কথা কও (১৯৪৮)

অন্যান্য
বিচিত্র জগৎ (১৯৩৭)
টমাস বাটার আত্মজীবনী (১৯৪৩)
আমার লেখা (বঙ্গাব্দ ১৩৬৮)
প্রবন্ধাবলী
পত্রাবলী
দিনের পরে দিন
তথ্যসূত্রবাংলা উইকিপিডিয়া


0 comments:

Post a Comment