Friday 27 November 2015


দীনবন্ধু মিত্রঃ



দীনবন্ধু মিত্র (১৮৩০ – ১ নভেম্বর১৮৭৩) উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা নাটকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রূপকার বাংলার আধুনিক নাট্যধারার প্রবর্তক মাইকেল মধুসূদন দত্তের সমসাময়িক দীনবন্ধু মিত্র অবশ্য মাইকেল প্রবর্তিত পৌরাণিক বা ঐতিহাসিক নাট্যরচনার পথে না গিয়ে বাস্তবধর্মী সামাজিক নাট্যরচনায় মনোনিবেশ করেন এই ধারায় তিনিই হয়ে ওঠেন পরবর্তীকালের নাট্যকারদের আদর্শস্থানীয়
দীনবন্ধু মিত্রের প্রথম প্রকাশিত নাটক নীলদর্পণ প্রকাশিত হয় ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে এর পরে ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় তাঁর দ্বিতীয় নাটক নবীন তপস্বিনী দীনবন্ধুর দুটি উৎকৃষ্ট প্রহসন হল ''সধবার একাদশী'' ও বিয়ে পাগলা বুড়ো ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে তাঁর অপর এক প্রহসন জামাই বারিক প্রকাশিত হয় ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় তাঁর সর্বশেষ নাটক কমলে কামিনী নাটক ছাড়াও দুখানি কাব্যগ্রন্থও দীনবন্ধু রচনা করেছিলেন – দ্বাদশ কবিতা(১৮৭২) ও সুরধুনী কাব্য (প্রথম ভাগ – ১৯৭১ ও দ্বিতীয় ভাগ – ১৮৭৬)

দীনবন্ধু মিত্রের জন্ম বনগাঁর চৌবেরিয়ায় পিতা কালাচাঁদ মিত্র দীনবন্ধুর পিতৃদত্ত নাম ছিল গন্ধর্ব নারায়ণ দরিদ্র পরিবারে জাত দীনবন্ধুর প্রাথমিক শিক্ষা গ্রাম্য পাঠশালায় সেখানে কিছুদিন পাঠগ্রহণের পর তাঁর পিতা তাঁকে জমিদারের সেরেস্তার কাজে নিযুক্ত করে দেন কিন্তু বিদ্যোৎসাহী দীনবন্ধু কলকাতায় পালিয়ে আসেন এবং পিতৃব্যের গৃহে বাসন মেজে লেখাপড়া চালিয়ে যান এই সময়েই দীনবন্ধু নাম গ্রহণ করে জেমস লঙের অবৈতনিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন পরে কলুটোলা ব্রাঞ্চ স্কুল (বর্তমানে হেয়ার স্কুল) থেকে ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে স্কুলের শেষ পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়ে বৃত্তি লাভ করে হিন্দু কলেজে (বর্তমানে প্রেসিডেন্সি কলেজ) ভর্তি হন ১৮৫১ সালে আবার উচ্চতর পরীক্ষায় বৃত্তিলাভ করেন এবং ১৮৫২ সালে তৃতীয় শ্রেণী থেকে সিনিয়র বৃত্তিলাভ করেন প্রত্যেক পরীক্ষায় বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে তিনিই সর্বোচ্চ স্থান অধিকার করেছিলেন এরপর সম্ভবত কোথাও শিক্ষকতা করেছিলেন দীনবন্ধুকারণ ১৮৫৩ সালে তিনি টিচারশিপ একজামিনেশনে কৃতকার্য হয়েছিলেন কলেজের সব পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি পটনায় পোস্টমাস্টার নিযুক্ত হন ক্রমে তাঁর পদোন্নতি হয় এবং তিনি ওড়িশানদিয়া ও ঢাকা বিভাগে এবং পরে কলকাতায় সুপারিনটেন্ডেন্ট পোস্টমাস্টার নিযুক্ত হন লুসাই যুদ্ধের সময় ডাকবিভাগের কাজে তিনি কাছাড়ে প্রেরিত হন এই সময় তাঁর তদারকি কর্মে সন্তুষ্ট হয়ে সরকার তাঁকে রায়বাহাদুর উপাধি দান করেন যদিও ডাকবিভাগের উচ্চস্তরের কর্মচারী হয়েও উপযুক্ত বেতন তিনি পাননি বরং অতিরিক্ত পরিশ্রমে স্বাস্থ্যহানিজনিত কারণে মাত্র তেতাল্লিশ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়
নাটক
নীলদর্পণ
দীনবন্ধু মিত্রের প্রথম ও সর্বশ্রেষ্ঠ নাটক নীলদর্পণ বাংলা সাহিত্যের একটি বিশেষ পরিচিত নাটক স্বাদেশিকতানীল বিদ্রোহ ও সমসাময়িক বাংলার সমাজব্যবস্থার সঙ্গে এই নাটকের যোগাযোগ অত্যন্ত গভীর এই নাটকটি তিনি রচনা করেছিলেন নীলকর-বিষধর-দংশন-কাতর-প্রজানিকর-ক্ষেমঙ্করেণ-কেনচিৎ-পথিক ছদ্মনামে যদিও এই নাটকই তাঁকে খ্যাতি ও সম্মানের চূড়ান্ত শীর্ষে উন্নীত করে

নবীন তপস্বিনী
দীনবন্ধু মিত্রের দ্বিতীয় নাটক নবীন তপস্বিনী এই নাটকে তাঁর সমসাময়িক মধুসূদনের প্রভাব বহুলাংশে চোখে পড়ে
কমলে-কামিনী
দীনবন্ধু মিত্রের দ্বিতীয় রোম্যান্টিক নাটক কমলে-কামিনী তাঁর জীবনের শেষ নাট্যকীর্তিও বটে এই নাটক রচনার অব্যবহিত পূর্বে কর্মসূত্রে দীনবন্ধু কাছাড়-মণিপুর অঞ্চলে কিছুদিন অতিবাহিত করেন
লীলাবতী
লীলাবতী একটি সামাজিক নাটক এর কাহিনীজাল অত্যন্ত জটিল কলকাতার সম্পন্ন গৃহস্থ হরিবিলাস চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর সন্তানদের দ্বন্দ্ব জটিল জীবনকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে এই কাহিনী
প্রহসন
বিয়ে পাগলা বুড়ো
জামাই বারিক
সধবার একাদশী
সধবার একাদশী১৮৬৩ খ্রীস্টাব্দে প্রকাশিত একটি প্রহসন উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে সুরা পান ও বেশ্যা বৃত্তি যুবকদের জীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছিল এই সামজিক বিপর্যয়ের কাহিনী অবলম্বনে প্রহসনটি রচিত

 তথ্যসূত্র: বাংলা উইকিপিডিয়া
Next
This is the most recent post.
Previous
Older Post

0 comments:

Post a Comment